বন্ধ্যাত্ব যখন সমস্যা

মনের লালিত বাসনা থেকেই একদিন জন্ম হয়
একটি শিশুর। প্রজনন মানুষের জীবন চক্রের
একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রজননে ব্যর্থ
হলে জীবন চক্র পরিপূর্ণ হয় না। আমাদের
পাঁচটি মৌলিক অধিকার যেমন জীবনের জন্য
অপরিহার্য তেমনি বাবা মা হওয়াটাও
জীবনের জন্য অপরিহার্য। কারণ পিতৃত্ত্ব
এবং মাতৃত্বের পিপাসা যদি কারোও না
মেটে সে মানসিক স্বাস্থ্যহীনতায় ভোগে।
কিন্তু সমাজের একটি অংশ জীবনের এ
অধ্যায় থেকে বঞ্চিত হয় নানা কারণে।
বন্ধ্যাত্ব কি এবং এর প্রতিকার কি কি এ
বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় আমি
যাবোনা। তবে চিকিত্সা যোগ্য নয় এমন
দম্পত্তিদের বিকল্প প্রক্রিয়ায় বাচ্চা নেয়া
সম্ভব কি সম্ভব নয় সে বিষয়ে আজকের
আলোচনা। সন্তান জন্ম দানের জন্য
যা দরকার তা হল-
নারী
১. একটি সুস্থ জরায়ু
২. দুটো ডিম্বনালীর দুটোই কিংবা অন্তত
একটি কর্মক্ষম ডিম্বনালী।
৩. দুটো ডিম্বশয়ের দুটোই কিংবা অন্তত
একটি ডিম্বাশয় পর্যাপ্ত ডিম্বানুসহ। (একটি
ডিম্বনালী এবং একটি ডিম্বাশয় যদি থাকে
তা অবশ্যই একই পাশের হতে হবে)
পুরুষ-
১. স্বাভাবিক পরিমাণ ও গুণগত মান সম্পন্ন
শুক্রানু।
২. শারীরিক সক্ষমতা।
এই ফ্যাক্টরগুলোর ব্যত্যয় ঘটার ক্ষেত্র আছে
অসংখ্য। সব কিছুর জন্য চিকিত্সাও আছে।
কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে
চিকিত্সকরা পর্যুদস্ত। সে সকল ক্ষেত্রে
কোন ক্রমেই বাচ্চা হওয়া সম্ভব নয়। আর তার
কারণ হলো-
১. ওভারিয়ান ফেইলিউর অর্থ্যাত্ ডিম্বাশয়ে
ডিম্বানু ফুরিয়ে যাওয়া। ফুরিয়ে যাবার
কারণগুলো হলো-
lবয়স ৩৫ এর বেশী হলে কমতে থাকে
lবার বার ডিম্বাশয়ের অপারেশন
(এন্ডোমেট্রিওসিস বা চকলেট সিস্ট এ)
lঅটোইম্যুইন ডিজিজ।
lজেনেটিক
lরেডিও থেরাপি ও কেমো থেরাপি।
২. দুই ওভারি টিউমার/ ক্যান্সারের জন্য
অপসারণ করা হলে।
৩. জন্মগতভাবে ওভারি ছোট থাকা।
৪. ডিজিজড ইউটেরাস, যেখানে
জরায়ু বাচ্চা ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে
ফেলে। এডিনোমায়সিস নামে এক ধরণের
টিউমার সম্পূর্ণ জরায়ুকে আক্রান্ত করে
কিংবা জরায়ুর
ভিতরের লাইনিংটা যদি কোন
কারণে নষ্ট হয়ে যায়।
৫. অসুস্থতার জন্য জরায়ু অপসারণ করা হলে।
৬. জন্মগতভাবে জরায়ু অনুপস্থিত থাকলে।
৭. পুরুষদের টেস্টিকুলার ফেইলিউর-যখন
অন্ডকোষে কোন শুক্রানু পাওয়া যায় না।
কারণগুলো হলো-
lজেনেটিক
lঅন্ডকোষ পেটের ভিতরে থাকলে
(আনডিসেন্ডেড টেস্টিস)
lছোট বেলায় মাম্পসে আক্রান্ত হয়ে
টেস্টিকুলার টিস্যু নষ্ট হয়ে গেলে।
lকোন আঘাত এর কারণে টেস্টিকুলার টিস্যু
নষ্ট হয়ে গেলে।
lকিছু কিছু ওষুধ দীর্ঘ দিন ব্যবহার করলে।
lরেডিও থেরাপি ও কেমো থেরাপি নিলে।
৮. টিউমার/ক্যান্সার-এর জন্য উভয় টেস্টিস
অপসারণ করা হলে।
এই ক্ষেত্রগুলো চিকিত্সার যোগ্যতা
হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় তাদের
সন্তানহীন জীবন যাপন মেনে নিতে হবে।
কিন্তু এও কি সম্ভব? যদি স্বামীর কোন
সমস্যা না থাকে সে ক্ষেত্রে পার্টনার এর
ত্রুটির জন্য বাবা হওয়া থেকে সে বঞ্চিত
হবে কেন? তেমনি যদি স্বামী শুক্রানুহীন হয়
তাহলে তার জন্য স্ত্রী মাতৃত্ব থেকে বঞ্চিত
হকে কেন?
ওভারিয়ান বা টেস্টিকুলার ফেইলিওর এর
কোন প্রতিরোধ আছে কি
কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিরোধ এবং কিছু
কিছু ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থায় নিজেদেরটা
দিয়েই বাচ্চা নেয়া সম্ভব।
মহিলাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা
১. বয়স বাড়ার সাথে সাথে যেহেতু ডিম্বানুর
সংখ্যা কমতে থাকে এবং নানান রকম
অসুস্থতায় ডিম্বাশয়, ডিম্বনালী এবং জরায়ু
আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে তাই ৩০
থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে ফ্যামিলি সম্পূর্ণ
করা উচিত।
২. এন্ডোমেট্রিওসিসের বেলায় ডিম্বাশয়
অপারেশন বার বার না করে ওষুধের মাধ্যমে
চিকিত্সা এবং পরবর্তীতে টেস্টটিউব করা।
৩. এন্ডোমেট্রিওসিস ও এডিনোমায়সিসের
বেলায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করা এবং
ফ্যামিলি সম্পূর্ণ করা।
৪. কোন ক্যান্সারের চিকিত্সার জন্য
কেমোথেরাপি বা রেডিও থেরাপি দেয়ার
প্রয়োজন হলে থেরাপির আগে ডিম্বানু
(অবিবাহিত মেয়েদের বেলায়) এবং ভ্রুন
(বিবাহিত মেয়েদের বেলায়) হিমায়িত করে
রাখা, পরবতীতে টেস্টটিউব চিকিত্সার জন্য।
পুরুষদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা
১. কোন ক্যান্সারের চিকিত্সার জন্য
কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেয়ার
প্রয়োজন হলে থেরাপির আগে শুক্রানু
হিমায়িত করে রাখা, পরবর্তীতে টেস্টটিউব
চিকিত্সার জন্য।
২. ছোট বেলায় মাম্পস হলে সাথে সাথে
সার্জারী করা যাতে টেস্টিকুলার টিস্যু নষ্ট
হয়ে না যায়।
৩. এক বছর বয়সের মধ্যে আনডিসেন্ডেড
টেস্টিসকে জায়গা মত আনা।
৪. ক্ষতিকর ওষুধ দীর্ঘ দিন সেবন না করা।
৫. সময় মত আঘাত ও অসুস্থতার চিকিত্সা
করা।
উভয়ের জন্যই জেনেটিক সমস্যার কোন
প্রতিরোধ নেই।
nঅধ্যাপিকা ডা: রাশিদা বেগম
স্ত্রীরোগ, প্রসূতি বিদ্যা ও বন্ধ্যাত্ব
চিকিত্সা বিশেষজ্ঞ
চীফ কনসাল্ট্যান্ট
ইনফাটিলিটি কেয়ার এন্ড রিসার্স সেন্টার
লিঃ