নামজারি কেন জরুরি?
নামজারি কেন জরুরি- সে প্রশ্নের উত্তর
জানার আগে সম্ভবত ‘নামজারি’ বলতে
আমরা কী বুঝি তা খানিকটা জানা
প্রয়োজন।
এক কথায় ‘নামজারি’ বলতে-
কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন বৈধ
পন্থায় ভূমি/জমির মালিকানা অর্জন
করলে সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে
তার নামে রেকর্ড আপটুডেট (হালনাগাদ)
করাকেই নামজারি বলা হয়। কোন
ব্যক্তির নামজারি সম্পন্ন হলে তাকে
একটি খতিয়ান দেয়া হয় যেখানে তার
অর্জিত জমির একখানি সংক্ষিপ্ত
হিসাব বিবরণী উল্লেখ থাকে। উক্ত
হিসাব বিবরণী অর্থাৎ খতিয়ানে
মালিকের নাম, কোন্ মৌজা, মৌজার
নম্বর (জে এল নম্বর), জরিপের দাগ নম্বর,
দাগে জমির পরিমান, একাধিক মালিক
হলে তাদের নির্ধারিত হিস্যা ও প্রতি
বছরের ধার্যকৃত খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর)
ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে।
( নামজারি খতিয়ানের নমুনা দেখতে
এখানে ক্লিক করুন)
এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। কেন
নামজারি এত জরুরি তার মধ্যে
নিম্নলিখিতগুলি গুরুত্বপূর্ণঃ
শুধুমাত্র কোন দলিলের মাধ্যমে
অর্জিত মালিকানার ভিত্তিতে অথবা
ওয়ারিশ হিসেবে পিতা-মাতার
জমিতে দখলসূত্রে থাকলেই সরকারি
রেকর্ডে উক্ত ভূমিতে তাঁর মালিকানা
নিশ্চিত হয় না। কোন ভূমিতে বৈধ
ওয়ারিশ বা ক্রয়সূত্রে মালিক হবার
পর পূর্বের মালিকের নাম হতে নাম
কেটে বর্তমান মালিকের নাম
অন্তর্ভুক্ত করতে হয়, তাহলেই তার
মালিকানা সরকার কর্তৃক নিশ্চিত হয়।
আর এটিই হল নামজারি পদ্ধতি।
আপনি যদি ওয়ারিশ হিসাবে বা
ক্রয়সূত্রে কোন জমির মালিক হন
কিন্তু নামজারি না করান, তবে
আপনার অজান্তে কোনভাবে এক/
একাধিক দলিল সম্পাদন করে কোন
স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি আপনার আগে
নামজারি করে ফেলতে পারে। তাতে
আপনি পরবর্তীতে নামজারি করতে
গেলে স্বাভাবিকভাবেই সমস্যায়
পড়বেন। বাস্তবক্ষেত্রে জটিলতা
আরো বাড়তে দেখা গেছে যখন উক্ত
স্বার্থানেষী ব্যক্তি অপর এক বা
একাধিক ব্যক্তির নিকট ঐ জমি
ইতোমধ্যে বিক্রয় করে ফেলেছে।
বর্তমানে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব
ক্ষেত্রে নানারকম মামলা মোকদ্দমার
সৃষ্টি হয়ে থাকে যা দীর্ঘদিন যাবৎ
অর্থ, সময় ও মানুষে-মানুষে সম্পর্কের
অবনতি ঘটায়।
সাধারণভাবে আমাদের ধারণা, দলিল
সম্পাদন হলেই কাজ শেষ। নামজারির
দরকার কী? এটি অত্যন্ত ভুল ধারণা।
দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে শুধুমাত্র
মালিকানা হস্তান্তর হয়, সরকারের
খাতায় মালিক হিসাবে স্বীকৃতি
পাওয়া যায় না।
রেজিস্ট্রেশন দপ্তরটি আইন
মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি অফিস। সকল
প্রকার দলিল সম্পাদন, রেজিস্ট্রিকরণ
উক্ত দপ্তরের কাজ। দলিল
রেজিস্ট্রিকরণের ক্ষেত্রে এখনও
পর্যন্ত যিনি বিক্রেতা তিনি আদৌ
উক্ত জমির মালিক হিসাবে সরকারের
রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত আছেন কী না তার
কোন রেকর্ড জেলা রেজিস্টার বা
সাব-রেজিস্টারের দপ্তরে নেই। ফলে
ভুলবশত: একই জমির এক বা একাধিক
দলিলের মাধ্যমে বিক্রয়ের ঘটনা ঘটে।
অপরদিকে ভূমি অফিসগুলি ভূমি
মন্ত্রণালয়ের অধীন যার কাছে
সরকারের কাছে রেকর্ডভুক্ত
মালিকদের নাম, পূর্ববর্তী
নামজারিকৃত মালিকদের নাম, নথিসহ
বিস্তর তথ্য থাকে। ফলে একবার
নামজারি করাতে সক্ষম হলে একই
জমির একাধিকবার বিক্রয় হলেও মূল
মালিকের আর ক্ষতিগ্রস্ত বা হয়রানী
হবার সম্ভাবনা কম থাকে।
নামজারি আবেদনের মাধ্যমে
আবেদনকারি যে স্বত্বলিপি অর্জন
করেন, যাকে প্রচলিত ভাষায় আমরা
‘খতিয়ান’ বলে থাকি, এর মাধ্যমে তার
উক্ত জমিতে মালিকানা স্বত্ব
প্রমাণে নিশ্চয়তা লাভ করেন যা অন্য
কোন দালিলিক মাধ্যমে লাভ করেন
না।
নামজারি করা না থাকলে শুধু
একাধিক বিক্রয়ের আশঙ্কাই
বিদ্যামান থাকেনা, পরবর্তীতে
আপনার অর্জিত সম্পত্তিতে দখলে
থাকলেও পরবর্তীতে আপনার
অবর্তমানে আপনার উত্তরাধিকারগণ
উক্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবার
আশঙ্কা থাকে।
যে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে
বর্তমানে ঋণ নিতে গেলে জমি
বন্ধকের ক্ষেত্রে খতিয়ান ছাড়া
আবেদন গ্রহণ করা হয় না।
ওয়ারিশনমূলে প্রাপ্ত জমির মালিকরা
যদি নামজারি না করান তাহলে
তাদের মধ্যে বিশেষত: নারী
অংশীদারগণ এবং ভবিষ্যতে তাদের
ওয়ারিশগণদের মধ্যে মারাত্নক
জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ জন্য ওয়ারিশগণ
সমঝোতার মাধ্যমে প্রথমেই নামজারি
সম্পন্ন করে রাখলে পরবর্তীতে অনেক
জটিলতা পরিহার করা সম্ভব হয়।
পরিশেষে, উপরোক্ত বিষয়গুলির
আলোকে জমির মালিকগণকে অনুরোধ
করা যাচ্ছে-যাঁরা এখনও গড়িমসি করে
নামজারি সম্পন্ন করেননি তারা
অনতিবিলম্বে নামজারির জন্য আবেদন
জানান। মনে রাখবেন, এটি একটি সহজ
প্রক্রিয়া, এতে ভয়ের কিছু নেই, যদি
আপনি এখানে উদ্ধৃত নিয়মগুলি একটি
পড়ে নেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন
তাহলে আপনার-জমি সংশ্লিষ্ট বড়
ধরণের আপত্তি কিংবা মামলা-
মোকদ্দমা না থাকে তবে নির্ধারিত ৬০
কার্যদিবসের মধ্যে আপনাকে
নামজারির খতিয়ান সৃজন করে দেয়া
সম্ভব।