ভূমি জরিপ কি? বাংলাদেশে কয়
ধরনের ভূমি জরিপ হয়েছিল?
ভূমি জরিপ হচ্ছে
এমন এক কৌশল, পেশা, বিজ্ঞান যা
নির্দিষ্টভাবে স্থানসমূহের ভূগোলক বা
ত্রিমাত্রিক অবস্থানের পারস্পারিক দূরত্ব
এবং কোণ নির্ণয় করতে পারে। ভূমি জরিপের
ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এমনকি প্রাচীন
মিসরীয় সভ্যতায় নীল নদের অতি প্লাবনের
কারণে জমির সীমানা মুছে যাবার পর দড়ি
দিয়ে সীমানা নির্ধারণের নথি পাওয়া
গেছে।
সাধারণত মৌজা ভিত্তিক ভূমির নকশা ও
ভূমির মালিকানা সম্পর্কিত খতিয়ান বা ভূমি
রেকর্ড প্রস্তুত কার্যক্রমকে ভূমি জরিপ বলা
হয়। জরিপের মাধ্যমে নতুন মৌজা নকশা ও
রেকর্ড তৈরী করা হয় ও পূর্বে প্রস্তুতকৃত
নকশা ও রেকর্ড সংশোধন করেও ভূমির
শ্রেণীর পরিবর্তনের সাথে মিল রেখে এবং
মালিকানার পরিবর্তনের ধারাবাহিবতার
সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ করে হালনাগাদ করা
হয়। এ যাবত কাল পর্যন্ত চার বার রেকর্ড
কার্যক্রম চালান হয় এ দেশে। রেকর্ড গুলো
হল:-
ক) মঘী জরিপ
খ) সি.এস. জরিপ (Cadastral Survey)
গ) এস.এ. জরিপ (State Acquisition Survey)
ঘ) পি.এস. জরিপ (Pakistan Survey)
ঙ) আর.এস. জরিপ (Revisional Survey)
চ) বি.এস. জরিপ (Bangladesh Survey)
ছ) সিটি জরিপ (City Survey)
ক) মঘী জরিপ
১৮৩৬ খ্রীষ্টাব্দ হইতে ১৮৪৫ পর্যন্ত বা ১৮৩২
খ্রীষ্টাব্দ হইতে ১৮৪৮ এর মধ্যে এই জরিপটি
হয়। বাংলাদেশে এই জরিপটি শুধুমাত্র
চট্টগ্রামে হয়েছিল। তবে সিট হয়নি, শুধুমাত্র
খতিয়ান হয়েছে।
খ) সি.এস. জরিপ (Cadastral Survey)
বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন ১৮৮৫ পাশ হওয়ার পর
১৮৮৮ সালে সর্ব প্রথম এই জরিপ কার্যক্রম
পরিচালিত হয়েছিল। সর্বশেষ দিনাজপুর
জেলায় ১৯৪০ সালে এ জরিপ কাজ শেষ হয়।
১৮৮৮ হইতে ১৯৪০ পর্যন্ত ৫০ বছর সময় লাগে এ
জরিপ কাজে। এ জরিপে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব
আইনের দশম অধ্যায়ের বিধান মতে দেশের
সব জমির বিস্তারিত নকশা প্রস্তুত করার
এবং প্রত্যেক মালিকের জন্য দাগ নম্বর
উল্লেখপুর্বক খতিয়ান প্রস্তুত করার বিধান
করা হয়।
ভূমি জরিপ
গ) এস.এ. জরিপ (State Acquisition Survey)
১৯৫০ সালে জমিদারী অধিগ্রহণ ও
প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর সরকার ১৯৫৬
সালে সমগ্র পূর্ববঙ্গ প্রদেশে জমিদারী
অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয় এরং রায়তের
সাথে সরকারের সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের
লক্ষ্যে জমিদারদের প্রদেয় ক্ষতিপুরণ
নির্ধারন এবং রায়তেরখাজনা নির্ধারনের
জন্য এই জরিপ পরিচালিত হয়েছিল। জরুরী
তাগিদে জমিদারগনের কাছ হইতে প্রাপ্ত
তথ্যের ভিত্তিতে এই জরিপ বা খাতিয়ান
প্রণয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল।তাই এই
জরিপে প্রচুর ভুলভ্রান্তি পরিলক্ষিত হয়।
ঘ) পি.এস. জরিপ (Pakistan Survey)
মূলত এস.এ. জরিপকেই পি এস জরিপ বলে।
ঙ)আর এস. জরিপ (Revisional Survey)
একবার জরিপ হওয়ার পর তাতে উল্লেখিত
ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য পরবর্তীতে যে
জরিপ করা হয় তা আরএস খতিয়ান নামে
পরিচিত। দেখা যায় যে, এসএ জরিপের
আলোকে প্রস্তুতকৃত খতিয়ান প্রস্তুতের সময়
জরিপ কর্মচারীরা সরেজমিনে তদন্ত করেনি।
তাতে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়ে গেছে। ওই
ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার জন্য সরকার দেশের
বিভিন্ন অঞ্চলে সরেজমিনে ভূমি জরিপ
করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই জরিপকেই আর.এস.
জরিপ বলে। সরকারি আমিনরা মাঠে গিয়ে
সরেজমিনে জমি মাপামাপি করে এই জরিপ
করেছেন বলে আর.এস.খতিয়ানে ভুলত্রুটি কম
লক্ষ্য করা যায়। পূর্বের ভুল ত্রুপি
সংশোধনক্রমে আর.এস.জরিপ এতই শুদ্ধ হয় যে
এখনো জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের
ক্ষেত্রে আর, এস জরিপের উপর নির্ভর করা
হয়। এর খতিয়ান ও ম্যাপের উপর মানুষ এখনো
অবিচল আস্থা পোষন করে।
চ) বি.এস.জরিপ (Bangladesh Survey)
বি.এস.জরিপ অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ একটি জরিপ।
বর্তমানে বি.এস.খতিয়ান চূড়ান্ত প্রচার না
হয়ে থাকলে জায়গা জমি রেজিষ্ট্রি কবলা
মূলে বিক্রয় করা যায় না। এই জরিপ কার্য শুরু
হয় ১৯৭০ সালে এবং শেষ হয় ১৯৮৫ সালে।
ছ) সিটি জরিপ (City Survey)
সিটি জরিপ এর আর এক নাম ঢাকা মহানগর
জরিপ।বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমতি
ক্রমে এ জরিপ ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সালের
মধ্যে সম্পন্ন করা হয়। এ যাবত কালে সর্ব
শেষ ও আধুনিক জরিপ এটি। এ জরিপ এর পর্চা
কম্পিউটার প্রিন্ট এ প্রকাশিত হয়