জমির খতিয়ান রদবদল
জমির খতিয়ান রদবদল কি ও কিভাবে
হয়:
খতিয়ান হচ্ছে অধিকারের দলিল।
জমির প্রকৃত মালিক এবং দখলকারের
বর্তমান দখলের একটি নির্ভরযোগ্য
প্রমাণ হচ্ছে এই খতিয়ান। অধিকাংশ
দেওয়ানী মামলাগুলো বিশেষ করে
জায়গা জমি সংক্রান্ত মামলাগুলো
খতিয়ানের উপর নির্ভরশীল।আর
খতিয়ানে থাকে নম্বর যার দ্বারা
রেকর্ড অব রাইটস অব টাইটেল বা স্বত্ব
লিপি কাগজে বা রেজিষ্টারে
লিপিবদ্ধ করা হয়। সেই স্বত্ব লিপির
ক্রমিক নম্বরকে এক একটি খতিয়ান
নম্বর বলা হয়। এই খতিয়ানগুলো বিভিন্ন
সময়ে তৈরী হয়েছে। খতিয়ানগুলো
যেমন সি.এস খতিয়ান, আর.এস খতিয়ান,
পি.এস খতিয়ান, বি.এস খতিয়ান, মাঠ
পচা ও নামজারী জরিপের ভিত্তি করে
তৈরী হয়েছে। প্রতারক দল জমির
খতিয়ান রদবদল করে মৃত ব্যক্তির
সম্পত্তি থেকে তার
উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করে ।
সংশ্লিষ্ট আইন ও প্রতিকার:
জমির খতিয়ান রদবদল দলিল
জালিয়াতির সামিল অর্থাত্ একই
শ্রেণীর অপরাধ যার শাস্তি  দন্ডবিধি
১৮৬০ এর ধারা ৪৬৩- ধারা ৪৭১ এর মধ্যে
অন্তভূর্ক্ত।
ধারা : ৪৬৩। দন্ডবিধির ৪৬৩ ধারা
অনুসারে, যদি কোন ব্যক্তি
জনসাধারণের বা কোন ব্যক্তি
বিশেষের ক্ষতিসাধনের কিংবা কোন
দাবি বা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার কিংবা
কোন ব্যক্তিকে তাহার সম্পত্তি
ত্যাগে প্রকাশ্য বা অনুক্ত চুক্তি
সম্পাদনে বাধ্য করিবার কিংবা কোন
প্রতারণা বা যাহাতে প্রতারণা
সংঘটিত হইতে পারে, তাহার উদ্দশ্য
কোন মিথ্যা দলিল বা দলিলের
অংশবিশেষ প্রনয়ণ করে, তবে উক্ত
ব্যক্তি জ্বালিয়াতি করিয়াছে বলিয়া
গন্য হইবে।
বিশ্লেষণ: দলিলটি যদি সম্পুর্ণ বা
আংশিক মিথ্যাভাবে তৈরি করা না হয়
তাহলে একে জ্বালিয়াতি বলা
যাবেনা। সম্ভাব্য জ্বালিয়াতি
সংঘটনের প্রস্তুতিকে জ্বালিয়াতি
বলা যায় না।
দন্ডবিধির ৪৬৩ হতে ৪৭৭ ধারা পর্যন্ত
জ্বালিয়াতি সম্পর্কিত বিষয়ে
বিস্তারিত বিধান রয়েছে।
ধারা: ৪৬৪। মিথ্যা দলিল প্রণয়ন: যদি
কোন ব্যক্তি নিণ্মোক্ত তিনটি
ক্ষেত্রে কোন মিথ্যা দলিল প্রণয়ন
করে, তবে উক্ত ব্যক্তি মিথ্যা দলিল
প্রণয়ন করিয়াছে বলে গণ্য হবে ।
প্রথমত: যদি কোন ব্যক্তি, যে ব্যক্তি
কর্তৃক বা যাহার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বা
যে সময়ে কোন দলিল বা তার
অংশবিশেষ প্রনীত, স্বাক্ষরিত,
সীলমোহরযুক্ত বা সম্পাদিত হয় নাই
বলিয়া সে জানে, সেই দলিল বা
তাহার অংশবিশেষ সেই ব্যক্তি কর্তৃক
বা তাহার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বা সেই
সময়ে প্রণীত, স্বাক্ষরিত
সীলমোহরযুক্ত বা সম্পাদিত হয় নাই
বলিয়া সে জানে, সেই দলিল বা
তাহার অংশবিশেষ সেই ব্যক্তি কর্তৃক
বা তাহার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বা সেই
সময়ে প্রনীত, স্বাক্ষরিত,
সীলমোহরযুক্ত বা সম্পাদিত হইয়াছে
বলিয়া বিশ্বাস জণ্মানোর উদ্দেশ্যে
অসাধুভাবে বা প্রতারণামূলকভাবে
অনুরুপ দলিল বা তাহার অংশবিশেষ
প্রনয়ণ,স্বাক্ষর বা সীলমোহরযুক্ত বা
সম্পাদন করে, কিংবা দলিলটি
সম্পাদিত হইয়াছে বলিয়া বুঝাইবার
জন্য কোন চিহ্ন বা প্রতীক স্থাপন করে;
কিংবা
দ্বিতীয়ত: যদি কোন ব্যক্তি তত্কর্তৃক
বা অপর ব্যক্তি কর্তৃক কোন দলিল
প্রণীত সম্পাদিত হওয়ার পর আইনানুগ
কর্তৃত্ব ব্যতীত অসাধুভাবে বা
প্রতারণামূলকভাবে উক্ত দলিলের কোন
গুরত্বপূর্ণ অংশ বাতিল করণের মাধ্যমে
বা অন্য কোন উপায়ে পরিবর্তন করিয়া
অনূরুপ পরিবর্তনের সময় সেই অপর
ব্যক্তি জীবিত বা মৃত যাই হোক; অথবা
তৃতীয়ত: যদি কোন ব্যক্তি অসাধুভাবে
বা প্রতারণামূলকভাবে এমন কোন
ব্যক্তিকে কোন দলিল স্বাক্ষর,
সীলমোহরযুক্ত, সম্পাদন বা পরিবর্তন
করিতে বাধ্য করে, যে ব্যক্তি মানসিক
অসুস্থতাহেতু বা নেশাগ্রস্ততা হেতু বা
তাহার প্রতি প্রতারণাহেতু উক্ত
দলিলের বিষয়বস্তু বা পরিবর্তনের
প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত নয় বলিয়া সে
জানে।
উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝা
যাবে:
ক একটি সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া উহা ঘ
কে অর্পন করে। ক পরে ঘ – কে তাহার
সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত করিবার
উদ্দেশ্যে সে একই সম্পত্তি খ এর কাছে
হস্তান্তর করে একটি দলিল প্রণয়ণ
করে। তাহার উদ্দেশ্য ঘ কে প্রদানের
ছয় মাস অাগেই সম্পত্তিটি খ কে
প্রদান করা হয়েছে এরকম বিশ্বাস
সৃষ্টি করা। ক জ্বালিয়াতি করেছে।
জালিয়াতির শাস্তি: যদি কোন ব্যক্তি
জ্বালিয়াতি করে, তবে উক্ত ব্যক্তি দুই
বত্সর পর্যন্ত মেয়াদের যে কোন
বর্ণনার কারাদন্ডে বা অর্থদন্ডে বা
উভয়দন্ডে দন্ডিত হবে ।
বিশ্লেষণ: বর্তমান ধারায়
জ্বালিয়াতির অপরাধে দন্ডের বিধান
দেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি
জ্বালিয়াতি করে তাহাকে দুই বত্সরের
কারাদন্ড বা জরিমানা, দন্ড অথবা
উভয়বিধ দন্ড দেওয়া যায়। কোন ব্যক্তি
যদি দলিল লিখন ও সহি সম্পাদনের
কাজে সম্পৃক্ত না থাকে তাকে
জালিয়াতির অপরাধে দন্ড দেওয়া
যায় না।
ফরিয়াদী পক্ষকে জ্বালিয়াতির
অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ
করতে হবে ।
ধারা: ৪৬৮। প্রতারণার উদ্দেশ্যে
জালিয়াতি: যদি কোন ব্যক্তি
প্রতারণা করিবার উদ্দেশ্যে কোন
জাল দলিল প্রণয়ন করে বা
জ্বালিয়াতি করে, তবে উক্ত ব্যক্তি
সাত বত্সর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদন্ডে
দন্ডিত হইবে এবং অর্থদন্ডে ও দন্ডিত
হবে ।
শাস্তি: বর্তমান ধারায় প্রতারণা
করবার উদ্দেশ্যে দলিল জালিয়াতির
অপরাধে সাত বত্সরের কারাদন্ড এবং
তদুপরি জরিমানার বিধান করা হয়েছে

বিশ্লেষণ:এই ধারায় বর্ণিত অপরাধটি
গুরুতর ধরনের অপরাধ। ক্ষেত্রবিশেষে
আসামীর দন্ড পরিবর্তন হতে পারে।
ধারা: ৪৭০। প্রতারণামুলকভাবে বা
অসাধুভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিক
প্রস্তুতকৃত যে কোন মিথ্যা দলিল জাল
দলিল বলে গন্য হবে ।
বিশ্লেষণ: জাল দলিল কথাটির সাথে
জনসাধারণ সুপরিচিত। দলিল জালকরণ
বলতে দন্ডবিধির
৪৬৪ ধারায় বর্ণিত মিথ্যা দলিল
সৃজনকে বোঝায় । দৃশত: কোন দলিলকে
জাল বা তঞ্চকী বলে সাব্যস্ত করা
কষ্টসাধ্য। কেননা বিশুদ্ধ্ব দলিল এবং
জাল দলিল বহুলাংশে হুবহু
সামজ্ঞস্যপূর্ন হতে পারে।
ধারা: ৪৭১। যদি কোন ব্যক্তি
প্রতারণামুলকভাবে বা অসাধুভাবে
এমন দলিল খাঁটি দলিল বলে ব্যবহার
করে যে দলিলটি জাল দলিল বলে সে
জানে বা তা বিশ্বাস করবার কারণ
আছে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি এমনভাবে
দন্ডিত হবে যেন সে দলিলটি জাল
করেছে ।
বিশ্লেষণ: কোন ব্যক্তি জাল দলিলকে
বিশুদ্ধ দলিল বলে ব্যবহার করলে ৪৭১
ধারার বিধান অনুযায়ী দুই বত্সরের
কারাদন্ডে দন্ডিত হবে ।জালিয়াতির
অপরাধে ৪৬৫ ধারায়ও দুই বত্সরের
কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।
(দন্ডবিধি, ১৮৬০)
করণীয় কী: স্থানীয় সাব রেজিষ্ট্রার
অফিসে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তার
জায়গার প্রকৃত খতিয়ান তুলে নেওয়ার
ব্যবস্থা করতে পারেন এবং তার
প্রতিকারের জন্য যদি আর্থিক ক্ষমতা
থাকে তবে সরাসরি ফৌজদারী
মামলায় যেতে পারে নিজস্ব
আইনজীবি নিয়োগের মাধ্যমে। আর
যদি আর্থিক ক্ষমতা না থাকে
সেক্ষেত্রে বিভিন্ন মানবাধিকার
সংগঠনের সাহায্য নিতে পারেন,যারা
বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা দিয়ে
থাকে।