নারী অংশীদারদের বঞ্চিতকরণ:
কিভাবে বঞ্চিত হয়:
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে নারীদের
উত্তরাধিকার স্বীকৃত থাকলেও পুরুষ
উত্তরাধিকার কর্তৃক তারা সম্পত্তি
থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
নিম্নলিখিত ভাবে নারী তার অধিকার
থেকে বঞ্চিত হন ।
মৃত ব্যক্তির পুত্র দ্বারা কন্যা
অংশীদারদের বঞ্চিতকরণ: আমাদের
দেশে সাধারণত পিতা মারা গেলে
তার কন্যাদেরকে ভিটাবাড়িসহ
জায়গা – জমিতে তাদের অধিকার নেই
বুঝিয়ে পুত্ররা অনেক সময় সম্পত্তির
উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করে।
আবার কন্যারা বিবাহিত হলেও তারা
পিতার কাছ থেকে কোন সম্পত্তি
পাবেনা মর্মে বোঝানো হয়। এসব
ক্ষেত্রে পুত্ররা অনেকটা জোর
দেখিয়ে কন্যাদের পিতার কাছে
প্রাপ্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে ।
বিধবা স্ত্রীকে বঞ্চিতকরণ:
মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের
সন্তান এমন নীচের বংশধর
থাকাকালে, স্ত্রী এক বা একাধিক
থাকলে একক বা সমষ্টিগতভাবে তার
মৃত স্বামীর সম্পত্তির ১/৮ অংশ পাবেন
তবে মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা
পুত্রের সন্তান এমন নীচের দিকে কেউ
না থাকে স্ত্রী এক বা একাধিক
থাকলে একক বা সমষ্টিগতভাবে ১/৪
অংশ পাবেন । তবে এক্ষেত্রে বিধবা
স্ত্রীকে তার স্বামীর উত্তরাধিকার
থেকে বঞ্চিত করে তার স্বামীর
অপরাপর অংশীদারেরা। তখন বিধবা
স্ত্রী একজন কোরানিক অংশীদার
হয়েও তার মৃত স্বামীর অংশ থেকে
বঞ্চিত হন।
সংশ্লিষ্ট আইন ও প্রতিকার: মুসলিম
পুরুষের মতই একজন নারী সম্পত্তি
অর্জন করতে পারে, সেজন্য মুসলিম
আইনে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা রয়েছে:
মুসলিম উত্তরাধিকার সুত্রে:
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার কন্যার
অধিকার (daughter):
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে মৃত
ব্যক্তির ঔরশজাত কন্যার অংশ বন্টনের
ক্ষেত্রে তিন অবস্থায় অংশ বন্টন করা
হয়। যেমন –
ক) মৃত ব্যক্তির কন্যা একজন থাকলে
এবং পুত্র না থাকলে সে ১/২ (অর্ধেক)
ভাগ সম্পত্তি পাবে।
খ) দুই বা ততোধিক কন্যা থাকলে এবং
কোন পুত্র না থাকলে তারা ২/৩ (তিন
ভাগের দুই) ভাগ সমানভাগে পাবে ।
গ) মৃত ব্যক্তির পুত্র থাকলে কন্যা/
কন্যারা অংশীদার হিসেবে সম্পত্তি
না পেয়ে পুত্রের সাথে ২:১ অনুপাতে
অর্থাত্ অবশিষ্টাংভোগী হিসেবে পুত্র
যা পাবে কন্যা তার অর্ধেক পাবে।
কন্যা কখনো পিতা/মাতার সম্পত্তি
হতে বঞ্চিত হয়না ।
স্বামীর সম্পত্তিতে বিধবা স্ত্রীর
অধিকার: (Wife): মৃত ব্যক্তির স্ত্রী
একজন থাকুক আর একাধিক থাকুক
তাদের সম্পত্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে
দুটি অবস্থা উল্লেখ করা যায়; যথা –
ক) মৃত ব্যক্তির সন্তান সন্ততি বা তার
নীচে কেউ না থাকলে স্ত্রী ১/৪ অংশ
পাবে।
খ) অপরদিকে মৃত ব্যক্তির সন্তান
সন্ততি বর্তমান থাকলে সেক্ষেত্রে
স্ত্রী ১/৮ অংশ পাবে। আর যদি মৃত
ব্যক্তির একাধিক বিধবা স্ত্রী থাকে,
তবে সব বিধবা স্ত্রীরাই উপরোক্ত ১/৪
বা ১/৮ অংশ হতে যেরকমই হয়, সমান
হারে তাদের অংশ ভাগ করে পাবে।
বিবাহের দেনমোহর: দেনমোহর হচ্ছে
কিছু টাকা, গহণা বা অন্য কোন
সম্পত্তি যা একজন মুসলিম মহিলা
বিবাহের সম্মান স্বরূপ স্বামীর কাছে
পাওয়ার অধিকারী হন। দেনমোহর সূত্রে
সম্পত্তি অর্জন বিষয়ে বলা হয়েছে,
যেহেতু দেনমোহর নির্দিষ্ট পরিমাণ
অর্থ বা অন্য কোন সম্পত্তি এবং একজন
স্বামী স্ত্রীকে সণ্মান দেখিয়ে
বিবাহ চুক্তির ফলশ্রুতিতে দেনমোহর
দিতে বাধ্য। তাই একজন মুসলিম মহিলা
দেনমোহর হিসেবে সম্পত্তি অর্জনের
অধিকারী। একজন মুসলিম বিধবা
স্বামীর সম্পত্তি হতে দেনমোহর বাবদ
প্রাপ্য অর্থ আদায় করতে পারেন।
এ ছাড়াও দান এবং উইলসূত্রেও একজন
নারী সম্পত্তির অধিকার পায়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের
সংবিধানে ৪২(১) ধারায় বলা আছে
আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা
নিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের
সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও
অন্যভাবে বিলি- ব্যবস্থা করিবার
অধিকার থাকিবে এবং আইনের কর্তৃত্ব
ব্যতীত কোন সম্পত্তি
বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়াত্ত
বা দখল করা যাইবেনা।
কাজেই নাগরিক হিসেবে একজন
নারীরও একজন পুরুষের মতই সম্পত্তিতে
অধিকার রয়েছে।
করণীয় কী :
ভুমি হতে বেদখল হলে কোন মহিলা, দখল
পুনরুদ্বারের জন্য যে সমস্ত প্রতিকার
আছে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো:
সালিশের মাধ্যমে
আদালতে মামলা করার মাধ্যমে
সালিশের মাধ্যমে:
কোন মহিলা জমি হতে বেদখল হলে তার
গ্রামের স্থানীয় লোকদের সহায়তায়
সালিশের মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তি তার
জমি ফেরত পেতে পারেন । সালিশে
মীমাংসার মাধ্যমে উভয় পক্ষের মধ্যে
সমাধান করা হয়ে থাকে ।
ফৌজদারী আদালতে মামলা:
কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি হতে বেদখল
হওয়ার ২ মাসের মধ্যে তিনি উক্ত
ব্যক্তিকে বেদখল করার চেষ্টা হতে
বিরত করার জন্য বা সম্পত্তিতে ঐ
ব্যক্তির প্রবেশ বারিত করে আদেশ
প্রদানের জন্য ১ম শ্রেণীর
ম্যাজিষ্ট্রেট এর আদালতে ফৌজদারী
কার্যবিধির ১৪৫ ধারার বিধান
অনুসারে মামলা করতে পারবেন। এ
ধরনের মামলা অল্প সময়ের মধ্যেই
নিস্পত্তি হয়ে থাকে।
[ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫ ধারা
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন]
দেওয়ানী আদালতে মামলা:
১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন
এর ঌ ধারার বিধান হলো যিনি ভুমি
হতে বেদখল হয়েছেন তাকে বেদখল
হওয়ার তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে
মধ্যে দখল পুনরুদ্বারের দাবিতে
দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে হবে
। ৬ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে মামলা
তামাদি দোষে বারিত হবে । এভাবে ৯
ধারায় মামলা করে আদালতের মাধ্যমে
দখল পুনরুদ্বার করা যায়।
বাদী যদি সম্পত্তিতে নিজের স্বত্ব
(মালিকানা) প্রমাণে সমর্থ নাও হন
কেবল বেদখল হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত দখলে
থাকা প্রমাণ করতে পারেন তবেই
তিনি তার পক্ষে ডিক্রী পেতে পারেন
।সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা
মতে প্রদত্ত ডিক্রী বা আদেশের
বিরুদ্ধে আপিল বা রিভিউ করার কোন
বিধান নেই । তবে মহামান্য
হাইকোর্টে রিভিশন করা যাবে। কিন্ত
সরকার কর্তৃক বেদখল হলে এ আইনে
কোন প্রতিকার পাওয়া যাবে না।
সম্পত্তিতে যার বৈধ মালিকানা স্বত্ব
আছে তিনি কোন কারণে বেদখল হলে,
বেদখল হওয়ার ১২ বছরের মধ্যে
[তামাদি আইন বা Limitation Act, 1908]
১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার
আইনের ৮ ধারা মতে দেওয়ানী
আদালতে মামলা করে সম্পত্তির দখল
পুনরুদ্বার করতে পারেন।
তবে কোন ব্যক্তির জমির স্বত্ব যদি
অস্বীকার করা হয় সেক্ষেত্রে সে ৪২
ধারায় মামলা করে এর প্রতিকার
চাইতে পারেন।
[সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮, ৯ ও
৪২ ধারাসমুহ এবং তামাদি আইনের
ধারাসমুহ বিস্তারিত জানতে ক্লিক
করুন]
এ ছাড়াও বিভিন্ন মানবাধিকার
সংগঠনের সাহায্য নিতে পারেন যারা
বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা প্রদান
করে থাকে।
আইনগত সহায়তা প্রদানকারী
মানবাধিকার সংগঠন:
১) ব্লাষ্ট অর্থাত্ বাংলাদেশ লিগ্যাল
এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট, ১৪১/১,
সেগুনবাগিচা, ঢাকা -১০০০
ফোন- ৮৩১৭১৮৫ , ৯৩৪৯১২৬।
নারী অংশীদারদের বঞ্চিতকরণ: কিভাবে বঞ্চিত হয়:
28 Tuesday Apr 2015
Posted LAW
in