ফৌজাদারি কার্যবিধিতে
এজাহারের (FIR) ও G.D. এর মধ্যে পার্থক্য
কি?
এজাহার (FIR) কি?
অপরাধীর শাস্তি দাবী করে বা
আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীতে
থানায় সরাসরি অপরাধের সংবাদ
লিপিবদ্ধ করাকে বলে এজাহার৷যা FIR
নামেও পরিচিত।FIR হলো First Information
Report বাংলায় প্রাথমিক তথ্য বিবরণী ।
এ বিবরণটা প্রথম দেয়া হয় বলে একে
প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বলে।ফৌজদারী
কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় এজাহার
সম্পর্কে বলা হয়েছে – কোন থানার
ভারপ্রাপ্ত অফিসারের নিকট কোন
অপরাধ সংঘঠিত হওয়া সম্পর্কে কোন
সংবাদ মৌখিকভাবে প্রদান করা হলে
তিনি সাথে সাথে তা লিখে তথ্য
প্রদানকারীকে পড়ে শুনাবেন এবং
তার স্বাক্ষর নিবেন৷ লিখিতভাবে
প্রদত্ত সংবাদেও তথ্য প্রদানকারী
স্বাক্ষর করবেন।এই তথ্য বিবরণী উক্ত
অফিসার, সরকার কর্তৃক নির্দেশিত
ফরমে লিপিবদ্ধ করবেন।এটাই এজাহার
বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী নামে
পরিচিত।
এজাহার যেভাবে দায়ের করবেন:
ফৌজদারী কার্যবিধি ১৫৪ ধারা
অনুসারে আমলাযোগ্য অপরাধের
সংবাদ পাওয়া গেলে তা নির্ধারিত
ফরম অনুসারে রক্ষিত রেজিস্টারে
লিপিবদ্ধ করতে হবে৷আমলাযোগ্য
অপরাধের সংবাদ মৌখিকভাবে
দেয়া হলে তা লিপিবদ্ধ করে সংবাদ
দাতাকে পাঠ করে শুনাতে হবে এবং
তাতে তার স্বাক্ষর নিতে হবে।
এজাহার গ্রহণে করণীয় বিষয়াবলী:
পুলিশ রেগুলেশন বেঙ্গল (পিআরবি)
১৯৪৩ এর ২৪৩ প্রবিধান এবং ফৌজদারী
কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় এজাহার,
এজাহারের শর্তাবলী বর্ণিত হয়েছে
তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
(১) আমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ থানার
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপি ২৭ ফরমে
লিপিবদ্ধ করবেন।
(২) এজাহার হলো জিআর (জেনারেল
রেজিস্টার) বা পুলিশী মামলার
ভিত্তি।এখান থেকেই জিআর মামলার
জন্ম হয় তাই আমলাযোগ্য কোন অপরাধের
সংবাদ পাবার সাথে সাথে
ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৭ ধারার
অধীনে তদন্ত আরম্ভ করতে হবে।
(৩) আমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ শুনে
অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য
পুলিশ অফিসার এফআইআর গ্রহণ হতে বিরত
থাকতে পারবেন না (পিআরবি ২৪৩(চ)
প্রবিধান)।
(৪) ডাক্তারী সার্টিফিকেট না
পাওয়ার কারণে এজাহার বিলম্বিত
করা যাবে না।
(৫) সংবাদাতা সংবাদটি
লিখিতভাবে দিতে না চাইলৈ বা
তা লেখা হলে তাতে সে স্বাক্ষর
দিতে না চাইলে সংবাদটি
জিডিভূক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
(৬) টেলিফোনে কোন আমলযোগ্য ঘটনার
সংবাদ পাওয়া গেলে
সংবাদদাতাকে থানায় এসে
এজাহার দায়েরের জন্য বলতে হবে,
সংবাদদাতা না এলে সংবাদ
গ্রহণকারী অফিসার নিজেই বিষয়টি
এফআইআর করে ব্যবস্থা নিবেন।
(৭) যার সম্পত্তিতে অপরাধ সংঘটিত
হয়েছে বা যার উপর আঘাত হয়েছে
তিনি এজাহার দিবেন তবে আমলযোগ্য
অপরাধের বিষয় যে কেউ এজাহার
দিতে পারেন।
(৮) অপরাধ সংঘটনের সংবাদটি কোন
আমলযোগ্য ঘটনার না হলে সে
সংবাদের ভিত্তিতে কোন এজাহার
নয়, জিডি এন্টি করে ব্যবস্থা নিতেহ
হবে, সংবাদদাতা অনেক কারণেই
স্বাক্ষর দিতে নাও চাইতে পারে সে
জন্য কার্যক্রম বন্ধ রাখা যাবে না।
(৯) পুলিশ কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে
কনস্টেবলও এজাহার গ্রহণ করতে
পারবেন।
(১০) ম্যাজিস্ট্রট আমলযোগ্য কোন অপরধা
তদন্ত করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ
দিলে ম্যাজিস্ট্রেটের প্রেরিত
লিখিত খবরই পুলিশ কর্মকর্তা এজাহারে
গণ্য করে ব্যবস্থা নিবেন।
(১১) আমল অযোগ্য ঘটনার তদন্ত
ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ছাড়া করতে
পারবেন না।
(১২) এজাহার আদালতে আসার সঙ্গে
সঙ্গেই কোর্ট অফিসার তা
ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট পেশ করবেন।
(১৩) এজাহারের কপি হবে ৫টি, এর মূল
কপি কোর্টে প্রেরণ করতে হবে।
(১৪) প্রথম কার্বন কপি যাবে পুলিশ সুপার
এর নিকট।
(১৫) দ্বিতীয় কার্বন কপি থাকবে
থানায়।
(১৬) সাদা কাগজে অতিরিক্ত কপি
যাবে সার্কেল সহকারী পুলিশ
সুপারের নিকট।
(১৭) সাদা কাগজে অতিরিক্ত কপি
পাবে এজাহারদাতা।
এজারের শর্তাবলী
(১) এজাহারে উল্লেখিত অপরাধটি
হবে আমলযোগ্য ;
(২) সংবাদটি বিস্তারিত না হল ও তা
গ্রহণযোগ্য হবে ;
(৩) সংবাদটি লিপিবদ্ধ করতে হবে ;
(৪) লিপিবদ্ধ সংবাদের উপর
সংবাদাতাকে স্বাক্ষর করতে হবে ;
(৫) নির্ধারিত ফরমে (বিপি-২৭)
সংবাদটি লিপিবদ্ধ করতে হবে ;
(৬) সংবাদ লিপিবদ্ধ করার পর তা
সংবাদদাতাকে পাঠ করে শুনাতে
হবে।
এজাহারের সাক্ষ্যগত মূল্য:
এজাহার যেহেতু কোন অপরাধ
সংঘটনের পর পরই দায়ের করা হয়, তাই
এজাহার হলো ঘটে যাওয়া ঘটনার
একটি বাস্তব চিত্র। কিন্তু এজাহার
প্রায়ই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লিখেন না
অর্থাত্ এজাহারদাতা নিজে না
লিখে অন্য কাউকে দিয়ে লেখান
যিনি ঘটনা দেখেননি, তিনি
এজাহার লিখতে গিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ
তথ্য এলোমেলো করে ফেলেন
এজাহার একটি লিখিত দালিলিক
সাক্ষ্য আর এ কারণেই এজাহারদাতা
কিংবা এজাহার গ্রহীতা এ দু’জনের
অন্তত একজনকে মামলার সাক্ষ্য পর্বে
আদালতে এসে সাক্ষ্য দিয়ে তা
প্রমাণ করতে হয়৷ অন্যথায় মামলা দুর্বল
হয়ে যায়।সাক্ষ্য আইনের ১৪৫ ধারা
অনুসারে এজাহারকে সাক্ষীর
সাক্ষোর সত্যতা কিংবা অসংগতি
প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা হয়৷
ফৌজাদারি কার্যবিধিতে
জেনারেল ডায়েরী G.D. কি?
জেনারেল ডায়েরী বা জিডি হলো
অপরাধ ও অন্যান্য সংবাদ বিষয়ক
রেজিস্টার। ফৌজদারী কার্যবিধির
১৫৪ ও ১৫৫ ধারা এবং পিআরবির ৩৭৭
প্রবিধানে সাধারণ ডায়েরীর বর্ণনা
রয়েছে। এতে বলা হয়েছে প্রতিটি
থানা ও ফাঁড়িতে (পি ফরম নং ৬৫-এ
২০০ পুষ্টার) একটি সাধারণ ডায়েরী
থাকবে। এটি প্রত্যেহ সকাল ৮ টায় খুলে
পরবর্তী ২৪ ঘন্টার সংবাদ রেকর্ড করে
পরের দিন সকাল ৮ টায় বন্ধ করতে হবে।
জেনারেল ডায়েরী G.D. কি কি
লিপিবদ্ধ হবে:
এ ডায়েরীতে লিপিবদ্ধ হবে
নালিশকারীরদের নাম, ঠিকানা, ধৃত
ব্যক্তির নাম, উদ্ধার করা অস্ত্রের
বিবরণ, জব্দকৃত মালামালের বিবরণ,
আসামী কোর্টে চালান দেয়ার তথ্য,
এলাকার খাদ্য-শস্যের মূল্য, উত্পাদন,
রাজনৈতিক অবস্থা, থানায় ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তাদের আগমন-প্রস্থান ইত্যাদি
সকল বিবরণ, মোট কথা জিডি হলো
একটি থানার চলমান চিত্ররূপ।
জিডিতে দিনের যাবতীয় কার্যক্রম ও
সংবাদাদি লিপিবদ্ধ করা হলেও
সাধারণ মানুষ বিভিন্ন কারণে
বিশেষত কারো দ্বারা ভীতি প্রাপ্ত
হলে, নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে
থানায় গিয়ে প্রায়ই জিডি করেন।
কিন্তু এ জিডি সম্পর্কে অনেকেরই
ধারনা জিডি মানে কোন বিষয়
থানাকে অবহিত রাখা। থানায়
জিডি করা হলে তা যদি কোন
আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটন বিষয়ে হয়
তবে থানা কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে
বিষয়টি আমলে নিয়ে অপরাধটি
প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিবেন।
অপরাধটি অধর্তব্য প্রকৃতির হলে
আদালতের অনুমতি নিয়ে তদন্ত করে
ব্যবস্থা নিবেন। আর জিডি’র বিষয়টি
Preventive Section এর হলে (যেমন ফৌঃ
কাঃ বিঃ ১০৭ ধারা) সরাসরি
আদালতে প্রসিকিউশন রিপোর্ট
দাখিল করবেন। মোট কথা থানায়
জিডি করা হলে থানা কর্তৃপক্ষ
বিষয়টি ফেলে রাখতে পারবেন না,
ফেলে রাখলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে
এর জন্য দায়ী হতে হবে।
জিডি’র গুরুত্ব:
আইনগত সহায়তা লাভের জন্য জিডি
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেবলমাত্র একটি
জিডি’র ভিত্তিতেই একটি মামলার শুরু
হতে পারে অথবা অপরাধের আশঙ্কা
থেকে একটি জিডি করার পর সে
অপরাধটি সংঘটিত হলে আদালতে ঐ
জিডি সাক্ষ্য হিসাবে গৃহীত (Exhibity)
হয়ে থাকে। তাই জিডি’র আইনগত মূল্য
অনেক। তবে থানায় জিপি করার পর
জিডি’র নম্বরটি নিজের সংগ্রহে
রাখতে হবে। প্রয়োজনে জিডি’র
রিসিভ কপি সংগ্রহে রাখতে হবে।
ফৌজাদারি কার্যবিধিতে এজাহারের (FIR) ও G.D. এর মধ্যে পার্থক্য কি?
28 Tuesday Apr 2015
Posted LAW
in