মৃত ওয়ারিশদের সন্তানদের বা
এতিমদের বঞ্চিতকরন:
কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার আগে তার
পুত্র কিংবা কন্যা সন্তান মারা গেলে
সেই পুত্র বা কন্যার সন্তানেরা মৃত
ব্যক্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত
হতো।
মূল মুসলিম হানাফী আইনে যদি কোন
ব্যক্তির মৃত্যুর আগে তার ওয়ারিশেরা
অর্থাত্ (ছেলেমেয়ে) মারা যায় তবে
সেই ব্যক্তির মৃত্যু পর তার ওয়ারিশদের
সন্তানরা তাদের বাবা-মা যেই
সম্পত্তি পেত তা অন্য ওয়ারিশদের ভাগ
করে দেওয়া হতো ।
সংশ্লিষ্ট আইন ও প্রতিকার:
মুসলিম ও পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ
১৯৬১: এই অধ্যাদেশের ৪ ধারায় মৃত
ব্যক্তির ওয়ারিশেরা তার আগে মারা
গেলে তার সন্তানেরা যাতে মৃত
ব্যক্তির সম্পত্তির উত্তরাধিকার
থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য ১৯৬১
সনের ১৫ জুলাই এই অধ্যাদেশ বলবত্
হয়েছে।
এই অধ্যাদেশের ৪ ধারার বিধান
অনুযায়ী- উত্তরাধিকার আরম্ভ হওয়ার
পূর্বে মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র বা কন্যার
মৃত্যু ঘটিলে সেই উত্তরাধিকার আরম্ভ
হওয়ার কালে উক্ত পুত্র বা কন্যার
জীবিত সন্তানগণ যদি কেহ থাকে,
ক্ষেত্রমতে, উক্ত পুত্র বা কন্যা জীবিত
থাকলে যা পেত, তার সমান অংশ শাখা
বা মওজুদ অনুযায়ী লাভ করিবে ।
ধারার উদ্দেশ্য: যেসকল দুর্ভাগা
সন্তানদের পিতা বা মাতা, পিতামহ
কিংবা মাতামহের জীবদ্দশায় মারা
গেছেন, তাদের দুর্ভোগ উপশম করাই
অত্র ধারার মূল উদেদ্দশ্য।
ধারার আওতা ও প্রয়োগ: এই ধারা
প্রয়োগের পূর্ব শর্ত হলো, মৃত ব্যক্তির
ছেলে কিংবা মেয়েকে উত্তরাধিকার
শুরু হওয়ার আগেই ইন্তেকাল করে
থাকতে হবে। অন্যথায়, এই ধারার
প্রয়োগ চলবে না।
১৯৬১ সনের ১৫ ই জুন হতে উত্তরাধিকার
শুরু হলে, এই ধারায় বর্ণিত
প্রতিনিধিত্বের নীতি কার্যকর। যদি
মৃত ব্যক্তির ছেলে কিংবা মেয়ে
উত্তরাধিকার শুরু হওয়ার আগেই মারা
গিয়ে থাকে এবং একই সাথে এই
অধ্যাদেশ বলবত্ হয়ে থাকে, তবে ৪
ধারার বিধান, এর পূর্ন শক্তিতে
প্রযোজ্য হবে এবং মৃত ব্যক্তির প্রাক –
মৃত ছেলে বা কন্যার সন্তানগণ মৃত
ব্যক্তির সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারীর
শ্রেণীভুক্ত হয়ে অংশীদার হবে।
মওজুদ অনুযায়ী বন্টন: এই অধ্যাদেশে
মূল ব্যক্তির মৃত্যুকালীন সময়ে রেখে
যাওয়া সম্পত্তির মওজুদের উপর
সমষ্টিগতভাবে উত্তরাধিকারীদের
মধ্যে বন্টনের নীতিকে গ্রহণ করা
হয়েছে।
বিষয়টি একটি উদাহরণের মাধ্যমে
পরিষ্কার করা যায় ।
‘কালাম’ ১৯৮০ সনের ১ লা মার্চ মারা
গেলেন। মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে
‘ফরিদ’ এবং দুই নাতি ‘জালাল’ ও
‘সালাম’ কে রেখে গেলেন। জালাল’
এবং ‘সালাম’ এর পিতা হাবিব যিনি
কালামের এর বড় ছেলে। হাবিব ১৯৭৮
সনের ১ লা জানুয়ারী মারা গেছেন।
প্রচলিত মুসলিম হানাফী আইনের
বিধান অনুসারে জালাল এবং সালাম
তাদের দাদা কালাম এর সম্পত্তিতে
কোন আংশ পেত না। কিন্তু বর্তমানে
মুসলিম ও পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ
১৯৬১ এর ৪ ধারার বিধান অনুসারে
হাবিব যা পেত, জালাল ও সালাম তা
পাবে অর্থাত্ তারা তাদের দাদার
সম্পত্তির অর্ধেক পাবে ।
আরেকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি
ব্যাখ্যা করা হলো
মুসলিম সুন্নী (হানাফী) আইনের বিধান
অনুসারে যখন মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র
সন্তান না থাকে, কিন্তু তিনি ১টি
কন্যা ও পুত্রের কন্যা রেখে মারা যান,
সেক্ষেত্রে তার নিজ কন্যা ১/২ অংশ
এবং পুত্রের কন্যা ১/৬ অংশ পাবে।
কিন্তু মুসলিম পারিবারিক আইন
অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী তার নিজ
কন্যা ১/৩ অংশ এবং মৃত পুত্রের কন্যা
২/৩ অংশ সম্পত্তি পাবে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন মানবাধিকার
সংগঠনের সাহায্য নিতে পারেন যারা
বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা প্রদান
করে থাকে।
আইনগত সহায়তা প্রদানকারী
মানবাধিকার সংগঠন:
১) ব্লাষ্ট অর্থাত্ বাংলাদেশ লিগ্যাল
এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট, ১৪১/১,
সেগুনবাগিচা, ঢাকা -১০০০
ফোন- ৮৩১৭১৮৫ , ৯৩৪৯১২৬।
মৃত ওয়ারিশদের সন্তানদের বা এতিমদের বঞ্চিতকরন
28 Tuesday Apr 2015
Posted LAW
in