“এনেমিয়া বা রক্তশূন্যতা” – লক্ষণ, কারন
ও করনীয়
এনেমিয়া বা রক্তশূন্যতা কি?
মানুষের রক্তে যখন লোহিত রক্ত
কনিকা (রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান
যা আমাদের দেহে অক্সিজেন বহন করে)
এর পরিমাণ কমে যায় তখন
তাকে আমরা এনেমিয়া বা রক্তশূন্যতা
বলি। প্রতি দশজন মহিলার একজন এই
রোগে ভোগেন, এর পাশাপাশি শিশু, পুরুষ
এবং রোগাক্রান্ত মানুষও এ
রোগে ভুগতে পারেন।
রক্তশূন্যতার লক্ষণ-
# এ রোগে আক্রান্ত
হলে আপনি মাত্রাতিরিক্ত
ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন অথবা দুর্বল
বোধ করতে পারেন, এমনকি পর্যাপ্ত
বিশ্রাম এবং ঘুমও আপনার ক্লান্তি দূর
করতে পারবে না। এর ফলে আপনার
মেজাজ
খিটমিটে হয়ে যেতে পারে এবং
স্মরণশক্তি কমে যেতে পারে। সেই
সাথে মাথা ঘোরা এবং চামড়া
ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়াও এ রোগের
লক্ষণ।
# এ রোগে আক্রান্ত হলে আপনার
হৃৎস্পন্দন
অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে (
যেমন- হৃৎস্পন্দন
কখনো বেড়ে যেতে পারে,
কখনো কমে যেতে পারে), ঘনঘন
নিঃশ্বাস ফেলা বা বুকে চাপ অনুভব
করা এবং বুকে ব্যথা অনুভব করাও এ
রোগের লক্ষণ।
# খাবারে আয়রন বা লৌহের অভাবে ২
বৎসর বয়সী প্রতি ৭টি শিশুর
১টি রক্তশূন্যতায় ভোগে। এসব
ক্ষেত্রে শিশুরা নানাবিধ অস্বাভাবিক
জিনিস খাবার ব্যাপারে আগ্রহ বোধ
করে যেমন- কাঁদা, বালি, বরফ,
আঁটা বা ময়দার গুড়া ইত্যাদি। সুষ্ঠু
চিকিৎসা না হলে এসব ক্ষেত্রে শিশুদের
মেধা বিকাশ বাধাগ্রস্থ হতে পারে।
# কিশোর বয়সের ছেলে-মেয়েদের
ক্ষেত্রে অবসাদগ্রস্থতাও রক্তশূন্যতার
লক্ষণ।
কারা এ রোগের ঝুঁকিতে আছেন?
# যেসব মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একই
রোগে ভুগছেন।
# যেসব গর্ভধারণক্ষম মহিলার ঋতুস্রাব
কালীন সময়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়।
# গর্ভবতী মহিলা।
# যারা কিডনির রোগে ভুগছেন।
# যারা লৌহ, ফলেট ও ভিটামিন বি-১২
সমৃদ্ধ খাবার কম খান।
# কিশোর বয়সের ছেলে-মেয়ে।
রক্তশূন্যতার কারন ও করনীয়
# খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণ
লৌহের যোগান
না পেলে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
প্রাণীজ খাবারের তুলনায় উদ্ভিজ
খাবার থেকে মানবদেহ লৌহের যোগান
কম পায় তাই, প্রাণীর কলিজা এবং লাল
মাংস বা এ ধরনের লৌহ সমৃদ্ধ প্রাণীজ
খাবার
না খেলে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
সঠিক মাত্রায় এসব খাবার গ্রহন করুণ।
# দীর্ঘমেয়াদী রোগ, প্রোটিন বা আমিষ
জাতিও খাবার
গ্রহনে অনিহা কিংবা হজমে গণ্ডগোল
এবং পাকস্থলীর বাইপাস অপারেশন এর
ফলে পাকস্থলির খাবার থেকে লৌহ
শোষণের ক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং
ফলশ্রুতিতে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে
পারে।
# কিছু কিছু ওষুধ এবং খাবার মানুষের
পাকস্থলিতে অন্যান্য খাবার হতে লৌহ
শোষণের মাত্রা কমিয়ে দেয়, এসব খাবার
ও ওষুধের মধ্যে আছে- দুগ্ধজাতীয় খাবার,
এন্টাসিড ওষুধ, চা ও কফি। সুতরাং লৌহ
সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পূর্বে ও
পরে এগুলো গ্রহন থেকে বিরত
থাকতে হবে।
# খাবারে ফলেট ও ভিটামিন বি-১২ এর
পরিমান কম থাকলে এসবের
অভাবে আপনার শরীরে লোহিত
রক্তকণিকার উৎপাদন
কমে যেতে পারে যা হতে পারে আপনার
রক্তশূন্যতার কারন। প্রাণীজ আমিষ যেমন
কলিজা, মাংস ইত্যাদিতে প্রচুর
ভিটামিন বি-১২ আছে এবং যা মানব
দেহ সহজে গ্রহন করে। এছাড়া সবুজ
শাকসবজি, ফলমূল, শিমের বিচি, ছোলা,
ডাল ইত্যাদিতে প্রচুর ফলেট রয়েছে।
সুতরাং এসব খাবার সঠিক মাত্রায় গ্রহন
করতে হবে।
# ক্রনিক
বা দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভুগলে শরীরে
লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন
কমে যেতে পারে, তাই এসব
ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্ষ নিয়ে ওষুধ
সেবন করতে হবে।
# এপ্লাস্টিক এনেমিয়া একটি রোগ
যাতে মানুষের অস্থিমজ্জা হতে রক্ত
কনিকা উৎপাদনের মাত্রা কমে যায়।
সাধারনত ক্যান্সার এর চিকিৎসা (যেমন
কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি)
গ্রহন কালিন সময়ে কিংবা ভাইরাসের
সংক্রমনে এমনটি হতে পারে। এসব
ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্ষ মোতাবেক
রক্ত ও ওষুধ গ্রহন করতে হয়।
# মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণের
ফলে এনেমিয়া হতে পারে। যেসব
কারনে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
হতে পারে সেগুলো হল- অপারেশন,
দুর্ঘটনা জনিত জখম, ঋতুস্রাব কালিন
অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। এসব
ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্ষ মোতাবেক
রক্ত ও ওষুধ গ্রহন করতে হয়।
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর
দেহে রক্তকণিকার উৎপাদন কম হয় তাই এ
রোগে আক্রান্তদের নিয়মিত রক্ত গ্রহন
করতে হয়।
উপরে উল্লেখিত “রক্তশূন্যতার কারন ও
করনীয়” অংশের ১ ও ৪ নং পয়েন্ট’এ কিছু
খাবারের উল্লেখ
আছে যা এনেমিয়া প্রতিরোধে কার্যকর
ভূমিকা রাখে, তাই এসব খাবার পরিমিত
মাত্রায় আপনার প্রতিদিনের
খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুণ;
তবে যেহেতু লাল মাংস যেমন গরু,
খাসি কিংবা ভেরার মাংস
ইত্যাদি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়; তাই
যারা হৃদরোগে আক্রান্ত বা এর
ঝুঁকিতে আছেন তারা ডাক্তারের
পরামর্ষ নিয়ে খাদ্যতালিকা নির্বাচন
করুণ। এছাড়া “রক্তশূন্যতার লক্ষণ”
অংশে যেসব লক্ষণের কথা উল্লেখ
করা হয়েছে সেগুলর এক বা একাধিক
লক্ষণ দেখা দিলে একজন বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওন।
রক্তশূন্যতা” – লক্ষণ, কারন ও করনীয
22 Friday May 2015
Posted Treatment
in