দলিল জাল কি না পরীক্ষা করুন

দলিল জাল কি না পরীক্ষা করুন

সাধারণত দেখা যায়, মালিকের ছদ্মবেশে
কাউকে মালিক সাজিয়ে জমি সাব-
রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিস্ট্রি করে
নেয়।অবশ্য এর সঙ্গে কিছু অসৎকর্মচারীর
যোগাযোগ থাকে। মালিকানা ছাড়াই
দলিলদাতা সাজতে পারে।
অনেক সময় দেখা যায়, বণ্টন নামার ক্ষেত্রে
সহ-শরিকদের অজান্তে ভুয়া বণ্টননামা করে
দলিল জাল করতে পারে। সাধারণত যেসব
ক্ষেত্রে আদালত থেকে বণ্টন নামা সম্পন্ন
করা হয়না, সেক্ষেত্রে দলিল জালের
সম্ভাবনা থাকে। গ্রামের লেখাপড়া না
জানা লোকদের বিভিন্ন প্রয়োজনে অনেক
সময় স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়।
অনেক সময় ঘষা মাজা করে এবং ওভার
রাইটিং বা কাটাছেঁড়া করেও দলিল জাল
করতে পারে। আবার মূল তারিখ ঠিক রেখে
দলিলের বিষয়বস্তু জাল করতে পারে।
মালিক বিদেশে থাকলে মূল দলিল থেকে
জালিয়াতি করা হতে পারে।
ধরা যাক, মালিক দীর্ঘদিন যাবৎদেশের
বাইরে আছেন। এই সুযোগে তাঁর এক
নিকটাত্মীয় হুবহু একটি জাল দলিল তৈরি
করে নিলেন এবং এ দলিল তিনি বিক্রয়
দলিল হিসেবে দেখালেন। তাঁর ওই আত্মীয় এ
দলিল দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণও
নিয়েছেন। পরে যখন এ ঋণের টাকা পরিশোধ
করতে পারেননি, তখন সার্টিফিকেট মামলা
হয় এবং মূল মালিকের বরাবর নোটিশ যায়।
এখন ঋণের বোঝা এসে দাঁড়ায় মালিকের
ওপর।এদিকে তাঁর নিকটাত্মীয় আত্মগোপন
করেন।
এজ মালিসম্পত্তি অর্থাৎ ভাই বোন মিলে যে
সম্পত্তি ভোগ করে থাকে, এ ক্ষেত্রে দেখা
যায়, ভাইয়েরা বোনদের না জানিয়ে দলিল
তাদের নামেই করিয়ে থাকে। পরে জমি
বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বোনেরা দাবি করলে
ক্রেতা বিপদে পড়তে পারে।
দলিল জাল কি না পরীক্ষা করুন ১. সাব-
রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের প্রকৃতি
অনুযায়ী চারটি রেজিস্ট্রার বা ভলিউমে
লেখা হয়ে থাকে। কোনো দলিল নিয়ে
সন্দেহ হলে রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষণ
করা দলিলের সাল মিলিয়ে দেখতে হবে। এ
জন্য নির্দিষ্টভাবে দরখাস্ত করতে হবে।
এতে দলিলটির যাবতীয় তথ্য দিতে হবে।
২. এক জমির একাধিক মালিকের নামে করা
থাকলে ধরে নিতে হবে দলিলটি জাল হতে
পারে। এ ক্ষেত্রে সরেজমিনে গিয়ে
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে মূল
মালিককে, তা নির্ণয় করতে হবে।
৩. অনেক সময় স্বাক্ষর জালিয়াতি করে
দলিলদাতা বা গ্রহীতার সাজা হয়। এ
ক্ষেত্রে স্বাক্ষর বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে
স্বাক্ষরের সত্যতা যাচাই করিয়ে নেওয়া
যেতে পারে। এ ছাড়া ভূমি অফিস থেকে
বিভিন্ন সিল পরীক্ষা করেও জালিয়াতি
নির্ণয় করা যায়।
খেয়াল রাখতে হবে, অনেক আগের দলিলে
আগের চিহ্নিত কিছু সিল ব্যবহারই থাকে।
আগের দলিল কিন্তু সিল যদি নতুন হয়, তাহলে
ধরে নিতে হবে, দলিলটি জাল হতে পারে।
একই সঙ্গে তারিখটিও ভালোভাবে যাচাই
করতে হবে। দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ
কোনো সরকারি বন্ধের দিন থাকলে
সন্দেহের অবকাশ থাকবে। অনেক সময়
অর্পিতসম্পত্তি বা মৃতব্যক্তির সম্পত্তি
জীবিত দেখিয়ে জাল করা হয়।
৪. সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে
জমির মিউটেশন বানামজারি সম্পর্কে খোঁজ
নিতেহবে। নামজারিতে ধারাবাহিকতা ঠিক
আছে কিনা, সেটা সুচারুভাবে পর্যবেক্ষণ
করতে হবে। যদি দেখা যায়, সিএস জরিপের
সঙ্গে বিক্রেতার খতিয়ানের কোনো গরমিল
আছে, তা হলে বুঝতে হবে, কোনো জটিলতা
আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, জরিপ
খতিয়ানে জমির পরিমাণ পরবর্তী সময়ে
যতবার বিক্রি হয়েছে, তার সঙ্গে জমির
পরিমাণ মিল আছে কিনা, তা যাচাই করে
দেখা। দাগ নম্বর, ঠিকানা এসব ঠিক আছে
কিনা, এসব যাচাই করতে হবে।
৫. জমির স্বত্ব কীবা মালিকানা যাচাই
করতে হবে। বিক্রেতার কাছ থেকে সব দলিল,
বিশেষ করে ভায়া দলিল চেয়ে নিতে হবে।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জানতে হবে
সব দলিলের ক্রমিক নম্বর, দলিল নম্বর ঠিক
আছে কিনা।
৬. সম্প্রতি কোনো আমমোক্তারনামা দলিল
থাকলে তাতে উভয়পক্ষের ছবি ব্যবহার
হয়েছে কিনা যাচাই করতে হবে।
৭. কোনো দান করা জমি হলে দলিলে
সম্পাদনের তারিখ দেখে কবে জমিতে
গ্রহীতা দখলে গেছেতা যাচাই করতে হবে।
দলিলটি রেজিস্ট্রি করা কিনা এবং দলিল
দাতার সঙ্গে গ্রহীতার সম্পর্ক কী, তা যাচাই
করতে হবে।
৮. সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া কোনো বিক্রীত
দলিলের দলিল লেখকের নাম ঠিকানা জেনে
সরেজমিন কথা বলে নেওয়া দরকার।
৯. দলিল সম্পাদনের সময় ব্যবহূত স্ট্যাম্পের
পেছনে কোন ভেন্ডার থেকে স্ট্যাম্প কেনা
হয়েছে এবং কার নামে কেনা হয়েছে
খেয়াল রাখুন। প্রতিটি স্ট্যাম্পের পেছনে
একটি ক্রমিক নম্বর উল্লেখ থাকে। এ নম্বরটি
ঠিক আছে কিনা, প্রয়োজনে স্ট্যাম্প
বিক্রেতার সঙ্গে দেখা করে যাচাই করে
নিন।
সূত্রঃ প্রথম আলো